
নিজস্ব প্রতিবেদক | নরসিংদী
এক বছর পেরিয়ে গেলেও থেমে নেই কান্না, থেমে নেই প্রশ্ন। নরসিংদীর চিনিশপুরের কিশোর তাহমিদ ভূঁইয়া (১৫) ও পলাশের যুবক ইমন হোসেনের (২২) রক্ত আজও বিবেককে নাড়া দেয়। ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন এ দুই তরুণ। সেই শোককে শক্তিতে পরিণত করে আজ শুক্রবার নানা শ্রেণিপেশার মানুষ, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো শ্রদ্ধা জানায় তাঁদের কবরে।
কবরেই জড়ো হলো শপথ, ফুল, অশ্রু সকালে সদর উপজেলার নন্দীপাড়ায় তাহমিদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে চোখের পানি লুকোতে পারছিলেন না তাঁর সহপাঠীরা। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা সভাপতি খায়রুল কবির খোকনসহ নেতৃবৃন্দ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। অন্যদিকে পলাশের দড়িচরে ইমনের কবরেও দেখা যায় শতশত মানুষের ঢল।
নরসিংদী শহরের নাছিমা কাদির মোল্লা হাইস্কুল অ্যান্ড হোমসে আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে খায়রুল কবির খোকন বলেন: “গোপালগঞ্জ, মিটফোর্ড, নরসিংদী—সবই এক পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ধারা। তাহমিদদের রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া হবে না। গণতন্ত্রের বিজয়েই হবে শহীদদের প্রকৃত শ্রদ্ধা।”
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল কাদির মোল্লা, জেলা বিএনপির নেতা আবদুল বাছেদ ভূঁইয়া, মঞ্জুর এলাহী ও বি. জি. রশিদ নওশের।
তাহমিদ ও ইমন: একটি দিনের শহীদ নয়, একটি প্রজন্মের প্রতীক
নবম শ্রেণির ছাত্র তাহমিদ ছিল পরিবারের প্রথম সন্তান। তার বাবা রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়ার কণ্ঠে আজও রক্তাক্ত সেই বিকেলের স্মৃতি: “হাসপাতাল থেকে আমার ছেলের লাশ আন্দোলনস্থলে এনে আবার গুলি করা হয়। আমি ৫০ গজ দূর থেকে দেখেছি, তাহমিদের নিথর দেহে গুলি পড়ছে। এটা কি কোন দেশের পুলিশ করে?”
ইমনের বাবা কাইয়ুম মিয়ার কণ্ঠেও ঝরে অভিমান: “ছেলে ভাত খাওয়ার সময় ফোন পায়। বলে, একটু গিয়েই আসি। এরপর ফিরে আসে লাশ হয়ে।”
১৮ জুলাইয়ের নরসিংদী: এক অধ্যায়, এক দগদগে স্মৃতি
গত বছরের এই দিনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে আন্দোলনে অংশ নেয়া হাজারো শিক্ষার্থী পুলিশি হামলার শিকার হন। গুলিবিদ্ধ হন আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী। তাহমিদ ও ইমন নিহত হন সেই হামলায়। নিহত হওয়ার আগে তাহমিদ স্কুল ইউনিফর্মেই ছিল, আর ইমন ছিল উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী।
শহীদ পরিবার, সহপাঠী ও মানবাধিকার কর্মীরা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ বিচার ও দায়ীদের শাস্তি দাবি করে আসছেন। এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।